লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা - লেবুর উপকারিতা | লেবু পানি তৈরি করার সঠিক নিয়ম

সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ বিজ্ঞানীদের মতে লেবু বহুকাল থেকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লেবু বাংলাদেশের খুব পরিচিত একটি ফল। ভিটামিন সি এর খুব ভালো একটি উৎস হচ্ছে লেবু। লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন। লেবুর ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস।

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

যেকোন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আন্টি অক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি লেবুতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও কিছুটা ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

লেবুর উপকারিতা

লেবু পছন্দ করে না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ডাল ভাত হোক আর শাক ভাত কিংবা মাছ মাংস প্রতিটা খাবারের সঙ্গে যেন এক টুকরা লেবু আমাদের খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ করে তোলে। লেবু কি শুধু আমরা সাধের জন্য খাই তা কিন্তু না এতে আছে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা যা সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত জানবো। লেবুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এর ক্যালসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। লেবুর উপকারিতায় ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার ভূমিকা রাখে।

হঠাৎ সর্দি কাশি হলে আমরা ওষুধের বিকল্প হিসেবে একটি লেবুর রস খেতে পারি। আবার যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে তারা হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস গ্রহণ করতে পারেন। লেবুতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম তাই যে কেউ প্রতিদিন একটি লেবু গ্রহণ করতে পারেন।

লেবুর যে বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল লেবুতে থাকা ভিটামিন সি যা শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। অর্থাৎ আপনি যখনই আয়রন জনিত সমস্যায় ভুগে আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করবেন তখন অবশ্যই একটি লেবু আপনাকে এর পাশাপাশি গ্রহণ করতে হবে।

নিয়মিত লেবু বা সাইটট্রাস্ট ফুড গ্রহণ না করলে যে সকল সমস্যা হয় তার মধ্যে স্কার্ভি, ত্বকের সমস্যা বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং দাঁতের বিভিন্ন জটিলতা এবং রক্তস্বল্পতা রোগেও ভুগতে পারেন। লেবু উচ্চমাত্রায় অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে যাদের মাউথ আলসার বা স্টোমাক আলসার রয়েছে তারা লেবুর রস গ্রহণে সতর্ক হবেন।

এছাড়া যারা কিডনি জনিত রোগে দীর্ঘদিন ভুগছেন বা ইউরিন এক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ তাদের কখনো সিরাম ইলেকট্রোলাইট দেখে সাইট্রাকফুট বা লেবু গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তবে লেবু খাওয়ার আরো বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তা হলো

  • লেবু এর ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবু ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • লেবু ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • লেবু ফুসফুসের জন্য ভালো ও হাইপার টেনশন কমায়।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহৃত হয় লেবু।
  • ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লেবু।
  • শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে বিশেষ কার্য কর লেবু।
  • দাঁতের প্রদাহ রোধ করে লেবু।
  • লেবু শরীরের সঠিক আয়রনের লেভেল বজায় রেখে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • শরীরকে রি হাইড্রেট করে লেবু।

লেবুর অপকারিতা

লেবুর উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে লেবুর অপকারিতা। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়ার কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা আজকে আমরা জানবো। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অম্লীয় উপাদান যার ত্বকের জন্য উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে তা ব্যবহার করলে এর অপকারও দেখা দিতে পারে যেমন জ্বালাপোড়া লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাএসিড যে। তাই রোদে বের হওয়ার পূর্বে কেউ লেবু ব্যবহার করবেন না।

অতিরিক্ত লেবু খেলে আমাদের দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবত বেশি পরিমাণে লেবু খেলে মুখের নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে মুখে ফড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসিড এবং বমি সম্ভবনা বাড়ে অতিরিক্ত লেবু খেলে।

ভিটামিন সি শরীরের জন্য ভালো তবে অতিরিক্ত ভালো নয় সেখান থেকে তো অ্যাসিড হবেই তার সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হতেই পারে। সেখান থেকে পরবর্তীতে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধুমাত্র লেবুর জল নয় যে কোন ডিটক্স ড্রিঙ্ক থেকে এ সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার মাধ্যমে শরীর শুকিয়ে যাওয়া ও বারবার বাথরুম যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।

গরম জলে লেবু যেহেতু ডিটক্স - সিফিকেশনে সাহায্য করে এর ফলে হতে পারে আবার বার বার প্রসাব এবং শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ইলেকট্রোলাইট সোডিয়াম আর বারবার বাথরুমে যাওয়ার ফলে ব্লাডারে চাপ পড়ে যা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

অতিরিক্ত ভিটামিন সি রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়াও শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ায় যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের লেবু না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকগণ। এছাড়া অতিরিক্ত লেবুর রস স্কিন ক্যান্সার ডেকে আনে।

লেবু খাওয়ার নিয়ম

আপনার যদি পেট ফাঁপা গ্যাস সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে একটি লেবুর রস খেতে পারবেন যা আপনার ওজন কমাতে এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ ছড়াতে বাধা সৃষ্টি করে। আবার আপনার যদি ভিটামিন সি এর ঘাটতি শরীরে দেখা দেয় তাহলে ভরা পেটে লেবু পানি খেতে পারেন। এছাড়া আপনি কাঁচা লেবু ও খেতে পারেন।

লেবু পানি বানানোর নিয়ম

যখন এই ওজন কমানোর কথা আসে তখন লেবু একমাত্র ফল যার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করা হয়। লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিডের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। যেটি আমাদের ত্বক, পাচনতন্ত্র ও কিডনির সমস্যার জন্য লাভদায়ক বলে মনে করা হয়। কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেকে বলে থাকেন যে লেবু জল খাওয়ার পরও তাদের ওজন কমতেছে না এবং ওজন আগের মতই থাকে।

কিছু লোক আবার লেবুতে মধু মিশিয়ে সেবন করে থাকে। আবার কিছু লোক গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে সেবন করেন। কিন্তু লেবুর পানি ততক্ষণ পর্যন্ত কাজে আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি লেবুর পানিটি সঠিক নিয়মে তৈরি করতেছেন।

লেবু পানি তৈরি করার সঠিক নিয়ম

একটি লেবুর খোসার মধ্যে দশটি লেবুর সমপরিমাণ নিউট্রিয়ানস থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ লোক লেবুর রস বের করে লেবুর খোসা ফেলে দেয়। এই লেবুর খোসা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি দেয়।

লেবুর খোসা ব্যবহার করার সময় ঐরকম লেবুর খোসা ব্যবহার করবেন যার খোসা মোটা হবে। লেবুর পানি তৈরি করার আগে প্রথমে লেবুর খোসাকে গ্লিটারের মাধ্যমে ভালো করে বের করে নিন তবে এর ভিতরের সাদা অংশটা নেওয়া যাবে না এটাতে তেতো ভাব রয়েছে।

লেবুর খোসার উপরের অংশে যে অয়েল পাওয়া যায় তা ওজন কমাতে চমৎকারভাবে কাজ করে। এরপর ২৫০ML পানিকে ফুটিয়ে নেই। এরপর এটা একটা গ্লাসে ঢেলে নেই এবং এক চামচ পরিমাণ খোসা ছিলা হওয়া ছড়িয়ে দিন। এরপর দুই মিনিট ধরে এটাকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন এরপর এটা যখন হালকা গরম থাকবে তখন এটিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে দিন। এভাবে লেবু পানি তৈরি হয়ে যাবে সঠিকভাবে।

লেখক এর শেষ কথা

প্রতিদিন একটি লেবু বা ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আপনার শরীরে দরকার হতে পারে। তাই একটা মানুষের সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে একটা যথেষ্ট। প্রতিদিন কোন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খেলে লেবু বা সাইট্রিক এসিড জাতীয় ফল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এছাড়াও ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে সঙ্গে লেবু খাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে হবে।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ চলাকালীন ফলের জুস বা লেবুর রস এড়িয়ে যেতে পারলেই সবচেয়ে ভালো। প্রতিদিন লেবুর রস ১২০ মিলি লিটার পর্যন্ত খেতে পারেন। তবে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এবং যাদের দুগ্ধ জাতীয় খাবারের সমস্যা রয়েছে তারা লেবুর রস অথবা খালি পেটে গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস খাবেন না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন