কাঁচা পেঁপে খেলে কি ওজন কমে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই

সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ আজকে আমি জানবো কাঁচা পেঁপে খেলে কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। পেঁপে একটি স্বাস্থ্যকর ফল। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে অনেক বেশি।

কাঁচা পেঁপে খেলে কি ওজন কমে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই

শরীর সুস্থ রাখতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে কাঁচা পেঁপে দারুন কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন মানুষের ভিতরের সৌন্দর্যের যত্ন নিলে তা আপনা আপনি বাইরের সৌন্দর্য হিসেবে ফুটে ওঠে। মানুষের শরীরের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে পারে এমনই এক দুর্দান্ত উপাদান হচ্ছে কাঁচা পেঁপে। পেঁপে কে আবার সুপারফুটও বলা হয়। এই পেঁপে আবার কারো জন্য আশীর্বাদ আবার কারো জন্য দুঃখের কারণ যদি আমরা তা সঠিক সময়  ও নিয়ম না জানি খাবার।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে কি হয়

গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর জন্যই কাঙ্খিত একটি বিষয় তাই এ সময় চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া প্রতিটি কাজেই একটু বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। ভ্রুণ যখন শরীরের ভেতর থাকে তখন থেকে কোন কিছু খাওয়ার আগে একটু সতর্ক হতে হয়। কাঁচা বা আধ পাকা পেঁপে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। কাঁচা পেঁপেতে লেটেক্স নামক একটি উপাদান আছে যা গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটাতে পারে। এই লেটেক্স জরায়ুর সংকোচন তৈরি করতে পারে যার কারণে প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে।

গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে কাঁচা পেঁপে খেলে এই ধরনের সংকোচনের কারণে গর্ভপাত হতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে কাঁচা পেঁপে খেলে তা প্লি-ট্রাম লেবারের কারণ হতে পারে। এছাড়াও কাঁচা পেঁপে খাওয়ার কারণে প্লাসেন্টার কিনারা থেকে রক্তপাত হতে পারে। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কাঁচা পেঁপেতে পাপাইন থাকে যা মায়ের শরীর  প্লোস্টাগ্ল্যান্ডিন্স ভেবে ভুল করতে পারে।

প্লোস্টাগ্ল্যান্ডিস হরমোনের মতো এক ধরনের উপাদান যা সাধারণত প্রসব ত্বরান্বিত করতে ব্যবহৃত করা হয়। কাঁচা পেঁপের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে কখনো কখনো প্রসব যদি নিজ থাকে শুরু না হয় তাহলে প্রসব তরান্বিত করার জন্য কাঁচা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

পজেস্টেরন হরমোন স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু পেঁপেতে থাকা পাপাইন মায়ের শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও পাপাইন ভ্রুনের মেমব্রেন গুলোকে দুর্বল করে দেয় যার কারণে ভ্রুনের সেল ও টিস্যুর গঠন ধীরগতির হয়ে যায়। এতে ভ্রূণের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

এছাড়াও লেটেস্ট একটি কমন এলার্জেন বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী যা কারো কারো শরীরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় এমনিতে মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। তাই এলার্জির ঝুঁকিও এ সময় একটু বেশি থাকে। আমরা জানি কাঁচা পেঁপে পিরিয়ড নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

কারণ তা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় যেহেতু হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকে তাই পেঁপে খেলে যে অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন ও তাপ উৎপন্ন হয় তাতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার কারণে ইডেমা বা তার শরীরে পানি আসতে পারে। এতে শরীরের রক্তনালিতে চাপ পড়তে পারে এবং রক্ত প্রবাহ ধীরগতির হতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার বিষয়ে।

খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খেলে কি হয়

কোন বয়সের মানুষের জন্য কাঁচা পেঁপে খাওয়া ভয়ংকর ক্ষতিকর। কখনো কখনো শুধু পেঁপে খাওয়ার কারণে জটিল মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন শুধুমাত্র পেঁপে না জেনে খাওয়ার কারণে। কাঁচা পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর বলে বিভিন্ন তথ্যে তা উঠে এসেছে। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে যে কাঁচা পেঁপে দেহের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

কাঁচা পেঁপে দেহের জন্য উপকারী এটা আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি। আমাদের দাদি নানা-নানী বিভিন্ন রোগের পথ্য হিসেবে পেঁপে খাইয়েছেন। আসল কথা হলো প্রতিটি খাবারেরই পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিক রয়েছে।

অনেকেই আছেন পেঁপে খুব উপকারী বলে বাচ্চার বয়স ৬ মাস পার হতে খিচুড়ি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পেঁপে খাইয়ে থাকে। কিন্তু এক বছরের কমই শিশুদের পেঁপে খাওয়ানো মারাত্মক ক্ষতিকর। পেঁপেতে যে অধিক পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তা এক বছরের নিচের শিশুরা হজম করতে পারে না যা তার শরীরের জন্যে অনেক ক্ষতি সাধিত করে।

শিশুরা এমনিতেই পানি খুব কম খায় এ কারণে তাদেরকে যদি পেঁপে খাওয়ানো হয় তাহলে তার শরীরে পানির পরিমাণ আরো কমে যাবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে। যদি না শিশুকে কাঁচা পেতে খাওয়াতে চান তাহলে অবশ্যই খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করে তা খাওয়াতে হবে।

কাঁচা পেঁপেতে যে পরিমাণে প্যাপাইন থাকে তা শরীরের ঝিল্লিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া পেঁপেতে থাকা লেটেস্ট গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটাতে পারে। কাঁচা পেঁপে যারা শুধুমাত্র চিবিয়ে খাচ্ছেন এবং কাঁচা পেঁপে জুস করে খাচ্ছেন অল্প পানি দিয়ে তাহলে এটি আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা সৃষ্টি করবে। এই ডিহাইড্রেশনের ফলে আপনার কিডনির নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

খালি পেটে কাঁচা পেঁপে ব্লাড সুগারের মাত্রা কমায় বলে সব সময় তা প্রকাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু এই পেঁপে হঠাৎ করে আপনার শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ কারণে ডায়াবেটিসের রোগীরা পেঁপে খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন হবেন। পেঁপে খাওয়ার পর আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা কমছে না বাড়ছে তা অবশ্যই খেয়াল করবেন।

অনেকেই কাঁচা পেঁপে খালি পেটে খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভুগেন। অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা যাদের আছে তারা অবশ্যই খালি পেটে পেঁপে খাওয়ার আগে সচেতনতা অবলম্বন করবেন।

কাঁচা পেঁপে খেলে কি ওজন কমে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই

প্রথমেই বলি পেঁপেতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি পেঁপেতে ৬৫ এর ও কম ক্যালোরি থাকে যা খাদ্য হিসেবে খাওয়া একেবারেই নিরাপদ। এতে আসের পরিমাণটা অনেক বেশি ও ক্যালরি কম থাকায় ওজন কমাতে ভীষণ ভাবে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য আস থাকে যা পেট ভরাতে সহায়তা করে। এর ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা থাকবে না। এক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর ক্যালোরি গ্রহণের ঝুঁকিটা কমে যাবে অনেকাংশে। ফলে আপনার ওজনটাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপের খাওয়ার উপকারিতা অনেক তবে এক্ষেত্রে আপনার শরীরে কোন সমস্যা আছে কিনা এবং কাঁচা পেঁপে খেলে তা কমছে না বাড়ছে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। হৃদরোগ প্রতিরোধে দারুন কার্যকরী কাঁচা পেঁপে।

সকালে কাঁচা পেঁপে সালাত অথবা ভর্তা করে খেলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে হার্ট অ্যাটাক ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। এতে বিদ্যমান অ্যান্টি এমোবিক ও এন্টি প্যারাসিকেল উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। পেঁপের আশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন শরীর সুস্থ রাখে তেমনি আর হজম প্রক্রিয়ার সাহায্য করে। পাচনতন্ত্র ভালো থাকলে শরীর সুস্থ থাকে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময়

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময় আমরা অনেকেই জানিনা। প্রতিটি খাবারের কিছু পুষ্টিগুণ আছে যা সঠিক নিয়মে না খেলে আমাদের শরীরে ডেকে আনবে ভয়ঙ্কর বিপদ। কাঁচা পেঁপে আমরা যারা শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কাঁচা পেঁপে খাওয়ার ফলে আমাদের কোন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয় না,

এক্ষেত্রে আমরা কাঁচা পেঁপে প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে সকালে জুস হিসেবে পান করতে পারি। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে যাদের শরীরে শারীরিক অন্য সমস্যা রয়েছে তাহলে তাদের ভরা পেটে কাঁচা কাঁচা পেঁপে খাওয়া উচিত এর ফলে তাদের পুষ্টিগণের মাত্ররাও  ঠিক থাকবে এবং শরীরে অন্য কোন জটিলতা দেখা দিবে না।

কাঁচা পেঁপের অপকারিতা

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার যেমনি রয়েছে উপকারিতা তেমনি রয়েছে অপকারিতা অনেক। যাদের ডায়াবেটিস সমস্যা আছে তাদের শরীরে শর্করা পরিমাণ বৃদ্ধি করে কাঁচা পেঁপে। কাঁচা পেঁপেতে থাকা প্যাপাইন দেহের ঝিল্লিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এছাড়াও পেঁপে ল্যাটেক্সে সমৃদ্ধ যা জরায়ুর সংকোচন রক্তপাত এমনকি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য কাঁচা পেঁপে ক্ষতিকর। এক বছরের কম শিশুকে কাঁচা পেঁপে খাওয়ালে তার শরীরে বয়ে আনবে নানান ধরনের সমস্যা। এছাড়াও যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা আছে সেটাও বেড়ে যাবে অনেকাংশে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার কারণে।

সর্বশেষ কথা

সবশেষে বলা যায় প্রতিটি খাবারেরই উপকারের দিক থেকে আছে এবং ক্ষতিকর দিকেও রয়েছে। তবে কোন খাবারটি আমাদের শরীরে উপকার বয়ে আনছে এবং অপকার বয়ে আনছে তা আমাদের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

যে কোন খাবার খাওয়ার ফলে আমার শরীরের সমস্যা সৃষ্টি হলো আবার কোন খাবার খাওয়ার ফলে আমার শরীরের সমস্যাটা দূর হলো সেটা আমাদের অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে। পেঁপে একটি খুব অল্প টাকার এবং খুব উপকারী একটি ফল বা সবজি যা সুপারফুট হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিত। তাই আমাদের শরীরের সবদিক বিবেচনা করে পেঁপে খেতে হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন