হানিনাট কি | হানিনাট খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চান, তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাদেরও মজা নিতে চান? তাহলে হানিনাট আপনার জন্য দারুণ একটা অপশন হতে পারে। মধু আর বিভিন্ন ধরনের বাদামের মিশ্রণে তৈরি এই খাবারটি স্বাদে যেমন মজাদার, তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কিন্তু আসলেই বা হানিনাট কি, আর কীভাবে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে, সেই সম্পর্কেই আজকে আলোচনা করা যাক।

হানিনাট কি - হানিনাট খাওয়ার নিয়ম

হানিনাট কি

আজকে আমি আপনাদের জানাবো হানি নাট কী? হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। হানি নাট বলতে সাধারণত মধুময় বাদাম কে বোঝানো হয়েছে আবার বলতে পারেন বাদাম ও মধুর মিশ্রণকে বলা হয়। বাদাম আসলে  প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভরা একটি খাবার। বাদাম এমন একটি খাবার যেখানে আপনি সব ধরনের পুষ্টিকর উপাদান পাবেন। আর বাদামে রয়েছে সর্বোচ্চ বেশি পরিমাণে ক্যালরি যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

বাদামের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের পুষ্টিগুণ তবে ভিটামিন বি এর পরিমাণ অনেক বেশি এছাড়াও বাদামে রয়েছে জিং ও ম্যাগনেসিয়াম। এই হানিনাট তাদের জন্য বেশি উপকারী যারা জিম করেন শারীরিক পরিশ্রম করেন। এমন বা যারা এমন কাজ করেন যারা সারাক্ষণই শারীরিক পরিশ্রম বেশি করে থাকেন। তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি খাবার হলো হানি নাট। হানিনাট সাধারণত যারা শারীরিক ভাবে কঠোর পরিশ্রম করে তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো হানিনাট।

আর যারা বসে কাজ করেন বা সেরকমভাবে শারীরিক পরিশ্রম করে না বা শারীরিক ব্যায়াম করেন না তাদের জন্য এটা হতে পারে একটি ভয়ংকর খাদ্য যা শরীরের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর।  হানিনাটে কিন্তু আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই প্রেসার ও আরো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে যদি আপনি শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করেন। আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে অমঙ্গল। আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম না করে হানিনাট খান ওজন বৃদ্ধি পাবে অনেক গুন। তাই যারা শারীরিক পরিশ্রম করে ও শরীরে অনেক ঘাটতি বা দুর্বলতা রয়েছে তাদের জন্য হানিনাট একটি আদর্শ খাদ্য।


হানিনাট বানানোর নিয়ম

যেকোনো ধরনের বাদাম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাদাম শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। শুধু সৌন্দর্য নয় স্বাস্থ্য রক্ষায় হানিনাট  অত্যন্ত উপকারী।
  
জানিনা বানানোর অনেক নিয়ম রয়েছে তবে আমি একটি ঘরোয়া নিয়ম যে আমরা বাসায় বসে তৈরি করতে পারব তা বর্ণনা করলাম।

সাধারণত যেকোনো শুকনো খাবার আমাদের শরীরের পুষ্টিগণের মাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে ও আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে।

হানিনাট ঘরোয়া ভাবে তৈরি করতে প্রথমেই যে উপাদানটি লাগবে তা হল মধু বা হানি দ্বিতীয়ত বাদাম বিভিন্ন ধরনের যেমন কাঠবাদাম চীনাবাদাম, কাজুবাদাম এছাড়াও আমরা আখরোট কিসমিস নিতে পারি  শুকনো খেজুর, কুমড়োর বীজ এসব কিছু একত্রে করে আমরা হালকা মিক্সারও করে নিতে পারি বা ভেঙ্গে নিতে পারি।

এরপর এটি একটি পরিষ্কার শুকনো জারে  এই মিশ্রণ এক মুঠো ও হাফ কাপ পরিমাণ মধু দিতে হবে এভাবে এক মুঠো মিশ্রণ ও হাফ কাপ মধু এভাবে দিয়ে দিয়ে আমাদের জারটি ভরতে হবে এর উপরে হালকা কালোজিরা ছিটিয়ে দিতে পারি অথবা তিলও দিতে পারি কারণ আমরা সবাই জানি কালোজিরের গুনাগুন। এভাবে এটি আমরা ঘরোয়াভাবে তৈরি করে খেতে পারি। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যা আমাদের শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে ও শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর করবে।

হানিনাট খাওয়ার নিয়ম

হানি নাটের সঠিক পুষ্টিগুণ পেতে হলে তা অবশ্য একটি সঠিক নিয়মে খেতে হবে। হানিনাটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি ও ফাইবার এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ। হানি না ছোট বড় সকল বয়সী মানুষের পুষ্টির চাহিদা ও ক্যালরির ঘাটতি পূরণের একটি আদর্শ খাদ্য। হানি নাট প্রতিদিন ৩ হতে চার চামচ খেতে পারি।

তবে এটা ভরা পেটে খাওয়াটা বেশি উপকারী আমাদের শরীরের জন্য। খালি পেটে খেলে আমরা পড়তে পারি কৃমি সমস্যা গ্যাস জনিত সমস্যায়। হানিনাট মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। হানিনাট সঠিক সময়ে পরিমাণমতো খেলে আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ কল্যাণ সাধন করবে।

হানি নাটস খেলে কি হয়

হানিনাট পুষ্টিগুণে ভরা একটি খাবার। আপনি যদি পরিমাণ মতন নিয়মিত হানিনাট খান তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে অনেক গুন। আপনার শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে আপনি শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে নিয়মিত সঠিক পরিমাণে হানিনাট খেতে পারেন। এর ফলে আপনার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

আপনার শরীরে ক্লান্তি দূর হবে অনেকাংশে। হানিনাট খেলে আপনার হার্ট সুস্থ থাকবে। হানিনাট খাওয়ার আরেকটি বিশেষ গুণ হল আপনার তারুণ্য ধরে রাখবে এবং মুখে পাশে ছাপ বোঝা যাবে না। অকাল বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনার ঘুম ভালো হবে মন ভালো লাগবে। এর ফলে আপনি পাবেন মানসিক শান্তি। আপনার খাওয়ার রুচি বাড়বে হানিনাট খাওয়ার ফলে।


হানি নাট খাওয়ার অপকারিতা

বাদাম মানেই তেল। আর হানি মানে মধু। এই দুটি আমরা যদি সঠিক পরিমাণে সঠিক নিয়মে না খাই তাহলে আমাদের শরীরের জন্য ডেকে আনবে দুরবস্থা। হানিনাট যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য বা তাদের শরীরে ক্যালরি ও ঘাটতি পূরণের একটি বিশেষ খাদ্য।

আর যারা কোন শারীরিক পরিশ্রম করে না এবং নিয়মিত হানিনাট খান তাদের শরীরে নিয়ে আসতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। হানিনাট যদি খালি পেটে খাওয়া যায় তাহলে এটা পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করবে। পেটে কৃমি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওকি ওকি ভাব পাবে। এতে প্রতিদিন তিন থেকে চার চামচের বেশি খাওয়া যাবেনা বেশি খেলে আমরা ডায়াবেটিস ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারি। তাই আমরা অবশ্যই সঠিক নিয়মে সঠিক পরিমাণে হানিনাট খাব।

হানিনাট খেলে কি মোটা হয়

বাদাম হল সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন। বীজ জাতীয় খাদ্য। এটাতে আছে জিং, আয়রন খুব ভালো প্রোটিন খুব ভালো ম্যাঙ্গানিজ থাকে এটি ব্রেনের জন্য খুব ভাল বিশেষ করে চীনে বাদাম যা আমরা সবাই জানি। চিনা বাদামে আছে কলিংগ্রিজ। কলিং আমাদের ব্রেনে নিউরো ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে যা আমরা চিনা বাদাম থেকে পেয়ে থাকি।

তাই বাদাম ওজন কমানোর জন্য না এতে হার্টের জন্য ভালো ব্রেনের জন্য ভালো আমাদের শরীরের  মাসেলের জন্য অনেক উপকারী। মধু নিয়মিত সঠিক পরিমাণ সেবন করলে অনেক উপকারী শরীরের শক্তি সঞ্চারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার মধু। আমরা যখন পরিশ্রম করি তখন আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট মাত্রা অনেক কমে যায় আর মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে ও শরীরের শক্তি যোগায়।

আমরা যদি হানিনাট কোন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম বা শারীরিক ব্যায়াম না করে নিয়মিত খাই তাহলে এটি আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। আর আমরা যদি কঠোর পরিশ্রম করে থাকি তারপরও আমাদের শরীরে শক্তির ক্ষয় হবেনা এবং হানিনাট আমাদের শরীরের দুর্বলতা দূর করে আমাদেরকে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

হানিনাট এর দাম

হানিনাট এর দাম বিভিন্ন ধরনের এটি নির্ভর করে মিশ্রণের উপর। আমরা যদি অনলাইনে হানিনাট অর্ডার করি তাহলে একটি হানি ডাবের জার প্রায় ৬ হতে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে পারে। আর যদি আমরা বাসায় সব ধরনের উপকরণ কিনে তৈরি করতে পারি তাহলে খুব কম খরচেই আমরা হানিনাট তৈরি করতে পারব এবং এটিতে সঠিক পুষ্টিগণের মাত্র বজায় থাকবে।

পরিশেষে বলা যায় যে হানিনাট শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ওর শরীরে ক্যালরির পরিমাণ অনেক গুণ বৃদ্ধি করে এবং ভিটামিন আয়রন ক্যালসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ এর অভাব পূরণ করে হানিনাট। হতে পারে একটি আদর্শ খাদ্য যদি তার সঠিক পরিমাণে সঠিক নিয়মে খাওয়া যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url