কত মাসে কখন এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়

আজকে আমি আপনাদের জানাবো কত মাসে কখন এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।  এইডস একটি ভয়ংকর মারণ ব্যাধি রোগ সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ লোক এ রোগে প্রাণ হারায় । দীর্ঘ সময় ধরে আলাদা কোন শারীরিক সমস্যা ছাড়াই এই মারন রোগ মানুষের শরীরে বাসা বানায়। এটি HIV ভাইরাস জনিত যৌন রোগ। এর ফলে মানুষের শরীরে এমন একটি অবস্থা দেখা যায় যে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই শেষ হয়ে যায়।

কত মাসে কখন এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়

এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশের সময় নির্দিষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রে, সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে কোন লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। জেনে নিন এইডস রোগের লক্ষণ কত মাসে প্রকাশ পায় এবং কীভাবে সাবধানে থাকবেন।


এইডস কী

এইডস একটি সংক্রামক রোগ। যা HIV নামক সংক্রামক ভাইরাসের ফলে হয়। এইডস এর পূর্ণরূপ হলো একোয়াট ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রম। এই রোগের ফলে সাধারণত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। শ্বেত রক্ত কণিকাকে ধ্বংস করে বা মেরে ফেলে HIV ভাইরাস। HIV এর পূর্ণরূপ হলো ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। তাহলে নামের মধ্যেই বোঝা যাচ্ছে এটি কতটা ক্ষতিকারক বা ভয়ংকর। এইডস রোগের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকদিন ভালো থাকা যায়।

এইডস কিভাবে হয়

গবেষণায় জানা গেছে যে এইডস সাধারণত সমকামী মনোভাবের কারণে বেশি হয়ে থাকে। এইডস হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। এইচআইভি আক্রান্ত রোগী বা এইচআইভির বাহক এর সাথে যদি যৌন সম্পর্ক থাকে তাহলে যার সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে সে নিজেও আক্রান্ত হতে পারে। এভাবে একাধিক জন HIV আক্রান্ত হতে পারে।

যদি কোন মা HIV আক্রান্ত থাকে তাহলে তার শিশুও HIV নামক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আবার এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশুও HIV পজেটিভ হতে পারে। আরেকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রক্ত যে সঞ্চালন আমরা করি বা মানুষের শরীরে দেই সেটা যদি নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন না হয় সে ক্ষেত্রে যদি এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্ত একজন  স্বাভাবিক মানুষের শরীরে যদি চলে যায় এর ফলে সে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়।

আবার যারা মাদক সেবন করে যেমন একজন আরেকজনের সিরিজ দিয়ে মাদক এক্ষেত্রে যদি কেউ HIV পজেটিভ থাকে তাহলে তার ব্যবহৃত সিরিজের মাধ্যমে এই রোগ অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। HIV পজেটিভ কোন রোগীর ব্যবহৃত ব্লেড বা তার দাড়ি কামানো সময় যদি কেটে যায় আবার যদি সেই ব্লেড দিয়ে কোন সুস্থ মানুষের  কাজে ব্যবহৃত হয় এক্ষেত্রে তার এইডস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এইডস রোগী কতদিন বাঁচে

এইডস মানেই মৃত্যু একটি ভ্রান্ত ধারণা আমাদের অনেকের মাঝেই আছে যা সত্য নয়। বর্তমানে এইডস নিরাময়ে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রায় ৩৫ ধরনের ওষুধ বের হয়েছে যা এইডস রোগীকে সুস্থভাবে অনেকদিন বাঁচতে সহায়তা করবে। আমরা জানি এইচআইভি ভাইরাস অনেক বছর ধরে শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।

লক্ষণ প্রকাশ পেতে পেতে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ রয়েছে যার মাধ্যমে বা যা সেবন করে একজন এইডস রোগীর অনেক দিন সুস্থ থাকতে পারে। তাহলে বোঝা গেল এইডস মানে মৃত্যু নয় সঠিক চিকিৎসায় ও সচেতনতার মাধ্যমে এর রোগী অনেকদিন বাঁচে।


এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

নারীদের ক্ষেত্রে খেয়াল করে রাখতে হবে ম্যাক্সট্রুয়াল সাইকেলের দিকে। স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তক্ষরণ যদি কম থাকে বেশ কিছুদিন ধরে তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাস বা এর বেশি সময় ধরে যদি আপনি পেটের সমস্যায় ভুগছেন তাহলে সাবধান। এটিও হতে পারে এইডস এর লক্ষণ।

দীর্ঘদিনের জ্বরের সাথে যদি পায়ে কিংবা কোমরে ব্যথা থাকে এটিও হতে পারে এইডস রোগের লক্ষণ। চোখ, মুখ, নাক, পিঠে, গলায় যদি লাল গোলাপি কালো রঙের রেস যদি বেরোতে শুরু করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেরি করবেন না এটি একটি লক্ষণ হতে পারে এইডস রোগের।

দীর্ঘদিন জ্বরের সাথে যদি গোলাপ ফুল দিয়ে শুরু করে অর্থাৎ গ্ল্যান্ড ফুলে যায় এটি হতে পারে এইডস রোগের লক্ষণ। দিনের পর দিন যদি ওজন কমতে থাকে তাহলে সাবধান এটিও একটি লক্ষণ হতে এইডস রোগের। চার সপ্তাহের বেশি যদি জ্বর থাকে তাহলে অবহেলা করবেন না। পাশাপাশি প্রতিদিনই যদি ঘুষ ঘুষে জ্বর থাকে দিনের বেলায় আর রাতের বেলা ঘাম হয় তাহলে সাবধান এটি একটি লক্ষণ এইডস রোগের।

এইডস রোগের প্রধান কারণ যৌন অনিরাপদ যৌন মিলন। এছাড়াও এইচআইভি পজেটিভ কারো রক্ত শরীরে গ্রহণ করলে বা এসআভি পজেটিভ লোকের ব্যবহৃত সিরিজ যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে এর ফলেও হতে পারে এইডস। আবার এইডস রোগে আক্রান্ত লোকের রক্ত যদি সুস্থ কোন মানুষের রক্তের সঙ্গে মিশে যায় তাহলে সে অবশ্যই এর চেয়ে আক্রান্ত হবে। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এইডস থেকে দূরে থাকতে পারি।


পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি লক্ষণ

এইচআইভির সেরকম কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না ৮ হতে ১০ বছরের মধ্যে। এটি প্রকাশ পায় যখন এইচআইভি সংক্রামক থেকে এইডস রোগে রূপান্তরিত হয়। বাইরে থেকে কোন রোগেরই লক্ষণ সেরকম ভাবে বোঝা যায় না।

কিন্তু কোন ব্যক্তির কখনো কখনো কিছু সাধারন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে তার ওজন কমে যাচ্ছে। ঘনঘন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। জ্বর হচ্ছে প্রায় এক মাসের বেশি। কাশি হওয়া, নিউমোনিয়া হওয়া, মুখে ছত্রাক হওয়া পুরুষদের মধ্যে এইচআইভির লক্ষণ।

এইচআইভি পজিটিভ লক্ষণ

এইচআইভি একটি সংক্রামক ভাইরাস যা শরীরে আট থেকে দশ বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এরপর যখন এটি প্রকাশ পাবে তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। যেমন জ্বর কাশি ইনফেকশন জনিত সমস্যা ক্ষুধামন্দা বমি বমি ভাব। পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণ কম হওয়া। ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দেখা দিবে ঘন ঘন এসব কিছুই এইচআইভি পজেটিভ এর লক্ষণ।

এইডস হলে করনীয়

এইডস আক্রান্ত রোগী অন্য সব রোগীর তুলনায় ভিন্ন। এ সময় রোগীরা মানসিক দিক থেকে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে তাই তাদের মানসিক দিকটা সবারই ভাবা উচিত। এক্ষেত্রে রোগীর রোগের সম্পর্কে সবাই যেন না জানতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এই রোগের সম্পর্কে কোন ভ্রান্ত ধারণা না নিয়ে এর সঠিক চিকিৎসা আমাদের করা উচিত যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সারা পৃথিবীতে। সঠিক চিকিৎসায় এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ডায়াবেটিস হাই প্রেসার এর মতই। এতে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই রোগ আছে রোগের চিকিৎসাও আছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না হয়ে আমাদের এর রোগের মোকাবেলা করা উচিত।

এইডস প্রতিরোধের উপায়


আমরা এই রোগটি প্রতিরোধ করতে পারি আমাদের সচেতনতার মধ্য দিয়ে। সচেতন হতে হবে রক্ত নেওয়ার সময় আমাদের যদি কোন শারীরিক সমস্যায় অন্য কারো রক্ত আমরা আমাদের শরীরে গ্রহণ করি তাহলে সেই রক্ত HIV পজিটিভ কিনা সেটা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এটি এইডস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে।

এইডস প্রতিরোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে হলো: যৌন সম্পর্ক করার সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা এটি শুধু এইডস না আরো অনেক যৌন রোগ থেকে  রক্ষা করে। মাদক সেবন বন্ধ করে বা একই সিরিজ দিয়ে শিরায় মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করে এইডস প্রতিরোধ করা যায়।

একই সুঁজ দিয়ে রক্ত বা ইনজেকশন আমাদের শরীরে দিচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা এভাবে আমরা এইডস প্রতিরোধ করতে পারি। অন্যের ব্যবহৃত ব্লেড ব্যবহার না করেও আমরা এই রোগটি প্রতিরোধ করতে পারি।

অবশেষে বলা যায় এই রোগটি নিয়ে আমাদের দেশে এখনো অনেক  ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছে। এই রোগ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারি। যা বয়ে আনবে মানব জীবনে সফলতা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন