ছোলার ক্ষতিকর দিক ও অঙ্কুরিত ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ শরীরকে সুস্থ রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি একটি খাবার হলো ছোলা। আজকে আমি আপনাদের জানাবো ছোলার ক্ষতিকর দিক ও অঙ্কুরিত ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে।

ছোলার ক্ষতিকর দিক ও অঙ্কুরিত ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

বর্তমানে পুষ্টিকর খাদ্য উপাদানের মধ্যে ছোলা অন্যতম। ছোলাকে আবার সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন বলা হয়ে থাকে। তবে ছোলার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে ছোলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানা উচিত।

ছোলার ক্ষতিকর দিক

ছোলার তেমন ক্ষতিকারক দিক নেই বললেই চলে। তবে যদি সঠিক নিয়মে না খাওয়া যায় তাহলে ছোলা হতে পারে প্রাণঘাতী। কাঁচা ছোলা সকালে যদি খালি পেটে কেউ খেয়ে থাকে এবং তারপর যদি দুধ, ভিনেগার, করলা এসব কিছু খেয়ে থাকেন তাহলে এটা শরীরে স্লো পয়জনের কাজ করবে।

পানিতে ভেজানো বা কাঁচা ছোলাতে পুষ্টিগুণের মাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং এটা হজম হতে অনেক সময় লাগায়। কেননা কাঁচা ছোলাতে থাকা ফাইবার হজম করাতে আমাদের পাচনতন্ত্রকে অনেক অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক এনার্জি দরকার হয়। এজন্য যদি কেউ কাঁচা ছোলা ভালো করে না চিবিয়ে খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে দুধ ভিনেগার খায় বা করলা জাতীয় সবজি খায় তাহলে তার শরীরের জন্য এটা ভয়ংকর ক্ষতি ডেকে আনবে।

অঙ্কুরিত ছোলার পুষ্টিগণের মাত্রা আরো অনেক বেশি। এভাবে তার ক্ষতিকারক দিক অনেক বেশি। অঙ্কুরিত ছোলায় এনজাইম, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল অনেক গুণ বেশি বেড়ে যায়। ভেজানো ছোলাকে অঙ্কুরিত করার জন্য লম্বা সময় ধরে ভিজিয়ে রাখার ফলে এতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়।

এজন্য বাচ্চা, গর্ভবতী, মহিলা ও বৃদ্ধদের অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক দুর্বল হয়। এর ফলে অঙ্কুরিত ছোলায় থাকা ব্যাকটেরিয়া তাদের শরীরের বিভিন্ন ভয়ংকর ক্ষতি সাধন করে।

প্রতিদিন ছোলা খেলে কি হয়

ছোলা যে আমরা শুধু কাঁচা খাই তা কিন্তু না ছোলা আমরা সিদ্ধ করেও খাই, রান্না করেও খাই, আবার ছোলা ভাজাও খেয়ে থাকি। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে এবং খোসা ছাড়িয়ে আদার সঙ্গে খেলে প্রচুর আমিষ ও এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। আমিষ শরীরের শক্তি যোগায়, অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও ছোলায় ফাইবার প্রোটিন ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। তবে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম। তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ উপকারী এটি। খালি পেটে প্রতিদিন ভেজানো কাঁচা ছোলা খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে অনেকাংশে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায় প্রতিদিন ছোলা খেলে।ছোলা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ছোলা প্রতিদিন খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। 

প্রতিদিন ছোলা খেলে চুল ভালো রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ছোলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এর মত পদার্থ যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমায় ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। এছাড়াও ছোলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় অনেকাংশে। কাঁচা ছোলা প্রতিদিন পরিমাণ মতো খেলে মুখের বলিরেখা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

ছোলা আমাদের শরীরের প্রতিটি অর্গান কে ভালো রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা ছোলা খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। শরীরে ব্যথা দূর করে ছোলা। হাত পায়ের জ্বালা দূর করতেও সাহায্য করে ছোলা।

সেদ্ধ ছোলার উপকারিতা

ছোলাকে আলাদা আলাদা ভাবে খেলে এর উপকারিতা ও আলাদাভাবে পাওয়া যায়।সেদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সেদ্ধ ছোলা আপনি দিনভর খেতে পারেন। ছোলার খোসায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় এটি রক্তে খারাপ কলেস্টরলের পরিমাণ অনেক কমে যায়।

সেদ্ধ ছোলা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণ করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে সেদ্ধ ছোলা। অস্থির ভাব দূর করে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সেদ্ধ ছোলার উপকারিতা অনেক।

কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা ছোলার উপকারিতা অনেক। এজন্য কাঁচা ছোলা আমাদের খালি পেটে খাওয়াই উচিত। কাঁচা ছোলা রাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেলে তার পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বেড়ে যাবে। তবে কাঁচা ছোলা খাওয়ার আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এটি খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে না হলে এটা আমাদের গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।কাঁচা ছোলা আমরা প্রতিদিন 40 থেকে 50 গ্রাম খেতে পারি।

প্রতিদিন কতটুকু ছোলা খাওয়া উচিত

একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ কাঁচা ছোলা খাওয়া যেতে পারে তা নির্ভর করে তার হজম শক্তি ও শারীরিক কার্যক্রমের উপর। একজন মানুষের যদি হজমে সমস্যা না থাকে তাহলে সে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম ছোলা খেতে পারে। তবে অবশ্যই ছোলা খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে।

কেননা ছোলা হজম করতে একটু ভারী হয়। যা অধিক মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে অপচন ও গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আবার যেসব লোক জিম বা এক্সারসাইজ করে তারা তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে  ১০০ হতে ১৫০ গ্রাম ছোলা খেতে পারে।


অঙ্কুরিত ছোলার উপকারিতা

ছোলা তো উপকারী এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু অঙ্কুরিত ছোলার গুনাগুন আরো অনেক বেশি। অঙ্কুরিত ছোলায় রয়েছে প্রোটিন ভিটামিন সি এনজেইম ফাইবার। সম্পূর্ণ মাত্রার একটি বিশেষ প্রোটিন অঙ্কুরিত ছোলা।

এতে এক ধরনের অ্যামিনো এসিড মিশ্রিত থাকে। শালা অঙ্কুরিত হবার পর এটি সম্পূর্ণ একটি প্রোটিন খাদ্যে পরিণত হয়। ফলে শরীরের হৃদ রোগ, অ্যানিমিয়া, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য ,ডায়াবেটিস, নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি খুবই কার্যকরী জনশক্তি বৃদ্ধিতে। অঙ্কুরিত ছোলা মাসল তৈরি তো সহায়তা করে।

সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম

সকালে খালি পেটে ছোলা হাজারো রোগের ঔষধ। সকালে খালি পেটে ছোলা খেতে হলে তা রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম। পরের দিন সকালে তা খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার পর তা হজম না হওয়া পর্যন্ত এক হতে তিন ঘন্টা অন্য কোন ভারী খাবার খাওয়া যাবেনা।

খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা আমরা সবাই কিছু জানি আবার কিছু জানি না যে সব যায় না তা আজকে আমরা খুব ভালোভাবে জেনে নেই। যারা প্রতিদিন কাঁচা ছোলা খায় তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯ শতাংশ কমে যায়।

সেই সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে মুখে বলি রাখা দূর করে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও মুখের দাগ দূর করতে সহায়তা করে।

ভাজা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা

ভাজা ছোলা খেলে আপনার শরীর থেকে দশটি রোগ দূর করতে পারবে। যদি কোন মানুষের ঘন ঘন সর্দি কাশি হয় তাহলে তাকে ভাজা ছোলা খেতে দিতে পারেন এর ফলে তার কফ অ্যাজমা সর্দি কাশি অর্থাৎ ফুসফুস সম্পর্কিত যেসব সমস্যা সব সেরে যাবে।

আবার যে সব মানুষের হার্ট খুব দুর্বল তারা ভাজা ছোলা খেলে খুব ভালো উপকার পাবে। ভাজা ছোলা উপকার থাকলেও এর অপকারিতাও রয়েছে। ভাজা ছোলা খেলে পেটে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। হজমের ব্যাঘাত ঘটবে। এর ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, সোলার অপকারিতা থেকে উপকারিতাই বেশি, যদি তা সঠিক নিয়মে খাওয়া যায়। তাই আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ছোলা খেতে হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন